
...ছাত্ররা বিদ্যালয়ের পরে চারুকলার ঠিক সামনে ছোট্ট জায়গায় সমবেত হয়, প্রতিবাদও করে, এই একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার। তবে সেখানে শিল্পাচার্য রূপকুমার তৈরি করেছেন চমৎকার আবহ। তাঁর আঁকা ‘গোলাপী’ ছবি সেখানে টানানো থাকে। নিজে কাজও করেন সেখানে, কখনো দেখা যায় কয়েক ঝুড়ি ডিমে বসে বসে গোলাপী রঙ করছেন। কখনও বা গোলাপী কাগজ কেটে ঘুড়ি বানাচ্ছেন। ছাত্র ছাত্রীরা হাত লাগায় তাঁর সঙ্গে। হৈ চৈ হয়। কোকিল ব্যান্ডের লোকজন গান গায়। চারপাশে মস্ত মস্ত সব গাছে গোলাপী রঙের সাকুরা ফুটে থাকে, চমৎকার পরিবেশ। হাটের মত ছবি কেনা-বেচাও হয়। শিল্পাচার্য এ জায়গার নাম দিয়েছেন ‘স্থবির হাট’। সাকিল ভাই বলেন, হবির হাট। ‘স’এর দোষ তার এখনও কাটেনি। মাঝে মাঝে জোটে কিছু বাউল-ফকির। তখন তো রীতিমত উৎসব। গোলাপীর নির্দেশে সেনাবাহিনীর লোক ছবির হাটে কড়া পাহারা দেয় বটে তবে শিল্পাচার্যকে বেশি ঘাটায় না তারা। এমনকি ছেলেমেয়েদেরও। কেননা, দেশে প্রচুর শিল্পী চাই, দ্রুত। যত শীঘ্র সম্ভব সমস্ত কিছু কালো রঙ দিয়ে ঢেকে ফেলা বাস্তবায়ন করতে হবে! এর মধ্যে দেখা গেল এক আধ পাগলা বুড়ো হাজির এক লড়ঝড়ে ক্যামেরা নিয়ে। সে অবশ্য ছবি তোলে শুধু আকাশের, কখনো শুয়ে কখনও গাছে চড়ে তোলে আকাশের ছবি। একদা সেই চিনতে পারে শিল্পাচার্যকে, ভাই বলে জড়িয়ে ধরে সে। রূপকুমার প্রথমে থতমত খেলেও ধীরে ধীরে বুঝতে পারে সেই তার হারিয়ে যাওয়া ভাই অপরূপকুমার।
রাজাদের ভিতর এই ভাই ভাই ব্যপারটা কখনই ভাল দিকে গড়ায় না। আর যখন সম্পত্তি হিসেবে আছে একটা গোটা দেশ। গোলাপী তার অধিকার ছাড়তে চাইবে কেন? ষড়যন্ত্রে কী না হয়। অপরূপকুমারকে পিতৃহত্যার মামলায় গ্রেপ্তার করা হল। ফাঁসানো হল নারী পাচারের কাজে, তাকে গোপন এলাকায় রেখে রোজই জেরা করে সেনাপ্রধান স্বয়ং। পরদিন কাগজে, দেখা যায় সব চাঞ্চল্যকর নতুন তথ্য। অপরূপকুমারের ক্যামেরা আর মেমোরিকার্ড আগেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এইবার সেগুলোই হয়ে উঠল অন্যপক্ষের হাতিয়ার। তাতে দেখে গেল নারীদেহের বিভিন্নাংশের ছবি। সেনাবাহিনী এযাবৎ যত নারী ধর্ষণ কর, খুন করে বেওয়ারিশ বলে ফেলে দিয়েছিল, জানা গেল, এগুলো সব অপরূপ ডনের কাজ, ছবিগুলো নাকি তারই প্রমাণ! বাস্তব প্রকৃতই নিষ্ঠুর। ‘স্থবির হাটে’ শুরু হল দীর্ঘকালীন বডি পার্টসের প্রদর্শনী। লোক এল, দেখল, বিশ্বাস করল। সবাই থুতু ছেটাতে শুরু লাগল অপরূপকুমারের ছবিতে, দাহ করল কুশপুত্তলিকা। সমস্ত খবরে, লোকের মুখে তখন কেবল এক প্রদর্শনীর কথা ‘ক্রসফায়ার এন্ড এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং’। আম্রিকায় বসে সব খবরই পেলেন ম্যাডাম আকাশী। সে বহুদিন আগেই অপরূপকুমারকে ছেড়ে এক বিদেশীর সঙ্গে হলিউডে পাড়ি দিয়েছিল। দেশের রিপোর্টাররা সবাই আম্রিকায় যেতে লাগল আকাশীর একটা স্টেটমেন্ট পাওয়ার জন্যে। কিন্তু তিনি মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেন, অপরূপকুমারের মৃত্যুদন্ড ঘোষণার ব্যপারে কোনো স্টেটমেন্ট দিলেন না।...
পুরো মালটা পাবেন এইখানে। কোন ব্যক্তি বা স্থানের সঙ্গে কোন রূপ মিল পেলে তা কাকতালীয় বলে মনে করাই ভাল। তা মোটেও ইচ্ছাকৃত নয় জানবেন। এই সিরিজের এইলেখাটি লেখা অবশ্য বাংলাদেশের বাইরে বসে তবে তাতে কিছু আসে যায় না।
No comments:
Post a Comment