Saturday, October 23, 2010

পরজনমে হইও গাধা

সারা রাজ্যে ঢেড়া পেটান হোল। বিজ্ঞাপন দেওয়া হল সমস্ত প্রথম শ্রেনীর দৈনিকে, দরকার হলে টিভিতেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে, কমিটি রেডি। রিপ্লাই আসতে লাগল ফটাফট। এক সপ্তাহে যা সব সাজেশন এল সব দেখে রাজার চক্ষু চড়কগাছ। সাপের ছোবল, কাঠখোলায় ভাজা টিকটিকির ল্যাজ, পাঁউরুটিতে আয়োডেক্স, ডেনড্রাইট! এই তাদের মেয়ে বড় হয়ে রাজকন্যা হবে না নামজাদা ইঞ্জিনিয়ার? নাহ, এই ভাবে হবে? দিন খামোখা চলে যাচ্ছে। রোজ রাতে স্বপ্নে হানা দিচ্ছে বিদঘুটে এক মিশমিশে জঙ্গল, স্মেলে বাঘ আর ভাল্লুক। ইস একটা নতুন শখ খুঁজে পাওয়া যাবে না? মন্ত্রীকে বরখাস্ত করে বলিউডের এক নামজাদা প্রোডাকশন ম্যানেজারকে আনলেন উড়িয়ে, রানীর পরামর্শে। রানী ছিলেন সমস্ত সিনেমার ম্যাগাজিনের পোকা, অন্যদিন থেকে আনন্দলোক। তিনি জানতেন প্রোডাকশন ম্যানেজাররা গোরুর গাড়ি থেকে বাঘের দুধ সব জোগাড় করতে ওস্তাদ। এই বার দেখা যাক ওস্তাদের কেরামতি। ওস্তাদ উড়ে এসেই রানীর সঙ্গে টানা সিটিং করলেন ছয় রাত্রি সাত দিন। রানীর যে আইডিয়া, যে জিনিসেরই কথা বলেন সবই নাকি সেলিব্রিটিদের আগে থেকেই আছে। কার কুকুরের হাসপাতাল আছে, কার পোষা সিংহ আছে, কে রাতে গাড়ি করে রাতে ফুটপাতে ঘুমন্ত মানুষদের মারে, কে প্রতিমাসে প্রেমিকা বদলায়। শুনতে শুনতে রানীর মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। ভাগ্যিস হাবলা রাজাটা শোনেনি, তাহলে মাথা আউলে এখনই দৌড়াত জঙ্গলের দিকে। তার নিজেরই এখন পাগল পাগল দশা। টানা সাতদিন স্নান নেই খাওয়া নেই, বেশ-ভুষা আউলা। রানীর মরার সময় নেই, শুধু প্রোডাকশন ম্যানেজারের পায়ে ধরতে বাকি, আপনি যা চান তাই দেব, শুধু একটা নতুন শখের কথা আমাদের বলুন। প্রোডাকশন ম্যানেজার বুঝলেন তার আর নিস্তার নেই। ইমিডিয়েট একটা আইডিয়া না এলে তাকে আর বেঁচে ফিরে যেতে হবে না।

সম্পূর্ণ গল্পটি পড়তে এইখানে ক্লিকান

গল্পটি প্রকাশিত গুরুচন্ডা৯'র পুজোইস্পেশাল- ২০১০, বাহন-কাহন-এ।

ছবি- সায়ন কর ভৌমিক সারা রাজ্যে ঢেড়া পেটান হোল। বিজ্ঞাপন দেওয়া হল সমস্ত প্রথম শ্রেনীর দৈনিকে, দরকার হলে টিভিতেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে, কমিটি রেডি। রিপ্লাই আসতে লাগল ফটাফট। এক সপ্তাহে যা সব সাজেশন এল সব দেখে রাজার চক্ষু চড়কগাছ। সাপের ছোবল, কাঠখোলায় ভাজা টিকটিকির ল্যাজ, পাঁউরুটিতে আয়োডেক্স, ডেনড্রাইট! এই তাদের মেয়ে বড় হয়ে রাজকন্যা হবে না নামজাদা ইঞ্জিনিয়ার? নাহ, এই ভাবে হবে? দিন খামোখা চলে যাচ্ছে। রোজ রাতে স্বপ্নে হানা দিচ্ছে বিদঘুটে এক মিশমিশে জঙ্গল, স্মেলে বাঘ আর ভাল্লুক। ইস একটা নতুন শখ খুঁজে পাওয়া যাবে না? মন্ত্রীকে বরখাস্ত করে বলিউডের এক নামজাদা প্রোডাকশন ম্যানেজারকে আনলেন উড়িয়ে, রানীর পরামর্শে। রানী ছিলেন সমস্ত সিনেমার ম্যাগাজিনের পোকা, অন্যদিন থেকে আনন্দলোক। তিনি জানতেন প্রোডাকশন ম্যানেজাররা গোরুর গাড়ি থেকে বাঘের দুধ সব জোগাড় করতে ওস্তাদ। এই বার দেখা যাক ওস্তাদের কেরামতি। ওস্তাদ উড়ে এসেই রানীর সঙ্গে টানা সিটিং করলেন ছয় রাত্রি সাত দিন। রানীর যে আইডিয়া, যে জিনিসেরই কথা বলেন সবই নাকি সেলিব্রিটিদের আগে থেকেই আছে। কার কুকুরের হাসপাতাল আছে, কার পোষা সিংহ আছে, কে রাতে গাড়ি করে রাতে ফুটপাতে ঘুমন্ত মানুষদের মারে, কে প্রতিমাসে প্রেমিকা বদলায়। শুনতে শুনতে রানীর মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। ভাগ্যিস হাবলা রাজাটা শোনেনি, তাহলে মাথা আউলে এখনই দৌড়াত জঙ্গলের দিকে। তার নিজেরই এখন পাগল পাগল দশা। টানা সাতদিন স্নান নেই খাওয়া নেই, বেশ-ভুষা আউলা। রানীর মরার সময় নেই, শুধু প্রোডাকশন ম্যানেজারের পায়ে ধরতে বাকি, আপনি যা চান তাই দেব, শুধু একটা নতুন শখের কথা আমাদের বলুন। প্রোডাকশন ম্যানেজার বুঝলেন তার আর নিস্তার নেই। ইমিডিয়েট একটা আইডিয়া না এলে তাকে আর বেঁচে ফিরে যেতে হবে না।


গল্পটি পাড়িতে ক্লিকান এইখানে। 

গল্পটি গুরুচন্ডা৯'র শারদ-সম্ভারে প্রকাশিত।

ছবিটি এঁকেছেন- সায়ন কর ভৌমিক

Sunday, August 15, 2010

ঘু ঘুড়ি ঘুড্ডি বাবা


আকাশ আস্তে আস্তে ভরে উঠল লাল নীল হলুদ কমলা বেগুণী গোলাপী সবুজ রঙে রঙ বেরঙের ঘুড়িতে আকাশ যেন ছিট কাপড়ের জামা অ্যাসেম্বলিতে সভা বসলে হয় কবিগান আর তরজা, সে এক অপরূপ ব্যাপার সেনারা দৌড়ে এল প্রধানমন্ত্রীর কাছে ম্যাডাম সারা আকাশ ঘুড়িতে ঢেকে গেছে, হেলিকপ্টার-প্লেন কিস্যু ওড়ানো যাচ্ছে না প্রধানমন্ত্রীর সেদিন এমনিতেই ঘুম ভাল হয়নি, বিশ্রী একটা স্বপ্ন দেখেছেন গোটা আর্মির কাপড়-জামা দিয়ে এলিয়েনরা ঘুড়ি বানিয়ে ওড়াচ্ছে আর সেনা বাহিনীর দামড়াগুলো উদ্যোম হয়ে দৌড়াচ্ছে ঘুড়ির পেছন পেছন, ঘেউ ঘেউ করে প্রধানমন্ত্রী চোখ বড়বড় করে তাদের ধমকে দিলেন, যাও তোরা নিজের চরকায় তেল দাও

প্রধানমন্ত্রীর ইষদউষ্ণ ঘিতে চুমুক দিতে দিতে তিনদিন অনেক ভাবলেন কিন' কোন কূল কিনারা পেলেন না এ কি হোলো রে! লোকে পড়াশোনার বই-খাতা, ধর্মগ্রন্থ, সরকারী দস্তাবেজ, প্রাচীন পুঁথি, বাড়ির দলিল, খবরের কাগজ সবকিছুই বানাচ্ছে রঙ-বেরঙের ঘুড়ি আর ওড়াচ্ছে বাজার রাস্তাঘাট সমস্ত ফাঁকা শুদু সেনা বাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে কি দুর্ভোগ রে বাবা! তিনি ক্ষমতায় এসেই জটিল এক নদী চুক্তি করেছিলেন প্রতিবেশী দেশের সাথে নদী শুকিয়ে কি সুন্দর সুন্দর সব চর গজিয়েছিল, আহা ভেবেছিলেন ডিজিটাল হাব করবেন সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস এদের সইবে কেন? চরে গেছে ঘুড়ি ওড়াতে, ফালতু ঝামেলা।
আকাশের সেই অদভূত রূপ দেখে মন্ত্রীরা সব কবি হয়ে গেল, ঘুড়ির নাম দিতে লাগল; পেটকাটি, চাঁদিয়াল, বগ্গা তাও হেলিকপ্টার রাস্তায় হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে...

লেখাটি পুরো পড়তে ক্লিক করুন এইখানে
লেখাটি আমার বেশ পছন্দের যদিও একটি পত্রিকায় প্রকাশ পায়নি, আজও জানি না কেন? শেষে প্রকাশিত হয়েছে সাপলুডুতে। সঙ্গের ছবিটি আমার তোলা পদ্মার চরে ঘুড়ি উৎসবে, যদিও বলে দেওয়াই ভাল তার সঙ্গে এই লেখার মিল খোঁজা উচিত নয় একেবারে। এটিও থাকবে নতুন বইটিতে।

স্থবিরহাট


...ছাত্ররা বিদ্যালয়ের পরে চারুকলার ঠিক সামনে ছোট্ট জায়গায় সমবেত হয়, প্রতিবাদও করে, এই একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থারতবে সেখানে শিল্পাচার্য রূপকুমার তৈরি করেছেন চমৎকার আবহতাঁর আঁকা গোলাপী ছবি সেখানে টানানো থাকেনিজে কাজও করেন সেখানে, কখনো দেখা যায় কয়েক ঝুড়ি ডিমে বসে বসে গোলাপী রঙ করছেনকখনও বা গোলাপী কাগজ কেটে ঘুড়ি বানাচ্ছেনছাত্র ছাত্রীরা হাত লাগায় তাঁর সঙ্গেহৈ চৈ হয়কোকিল ব্যান্ডের লোকজন গান গায়চারপাশে মস্ত মস্ত সব গাছে গোলাপী রঙের সাকুরা ফুটে থাকে, চমৎকার পরিবেশহাটের মত ছবি কেনা-বেচাও হয় শিল্পাচার্য এ জায়গার নাম দিয়েছেন স্থবির হাট সাকিল ভাই বলেন, হবির হাটএর দোষ তার এখনও কাটেনি মাঝে মাঝে জোটে কিছু বাউল-ফকিরতখন তো রীতিমত উৎসবগোলাপীর নির্দেশে সেনাবাহিনীর লোক ছবির হাটে কড়া পাহারা দেয় বটে তবে শিল্পাচার্যকে বেশি ঘাটায় না তারা এমনকি ছেলেমেয়েদেরওকেননা, দেশে প্রচুর শিল্পী চাই, দ্রুতযত শীঘ্র সম্ভব সমস্ত কিছু কালো রঙ দিয়ে ঢেকে ফেলা বাস্তবায়ন করতে হবে! এর মধ্যে দেখা গেল এক আধ পাগলা বুড়ো হাজির এক লড়ঝড়ে ক্যামেরা নিয়েসে অবশ্য ছবি তোলে শুধু আকাশের, কখনো শুয়ে কখনও গাছে চড়ে তোলে আকাশের ছবিএকদা সেই চিনতে পারে শিল্পাচার্যকে, ভাই বলে জড়িয়ে ধরে সেরূপকুমার প্রথমে থতমত খেলেও ধীরে ধীরে বুঝতে পারে সেই তার হারিয়ে যাওয়া ভাই অপরূপকুমার

রাজাদের ভিতর এই ভাই ভাই ব্যপারটা কখনই ভাল দিকে গড়ায় নাআর যখন সম্পত্তি হিসেবে আছে একটা গোটা দেশ গোলাপী তার অধিকার ছাড়তে চাইবে কেন? ষড়যন্ত্রে কী না হয়অপরূপকুমারকে পিতৃহত্যার মামলায় গ্রেপ্তার করা হলফাঁসানো হল নারী পাচারের কাজে, তাকে গোপন এলাকায় রেখে রোজই জেরা করে সেনাপ্রধান স্বয়ংপরদিন কাগজে, দেখা যায় সব চাঞ্চল্যকর নতুন তথ্যঅপরূপকুমারের ক্যামেরা আর মেমোরিকার্ড আগেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এইবার সেগুলোই হয়ে উঠল অন্যপক্ষের হাতিয়ার তাতে দেখে গেল নারীদেহের বিভিন্নাংশের ছবি সেনাবাহিনী এযাবৎ যত নারী ধর্ষণ কর, খুন করে বেওয়ারিশ বলে ফেলে দিয়েছিল, জানা গেল, এগুলো সব অপরূপ ডনের কাজ, ছবিগুলো নাকি তারই প্রমাণ! বাস্তব প্রকৃতই নিষ্ঠুরস্থবির হাটে শুরু হল দীর্ঘকালীন বডি পার্টসের প্রদর্শনীলোক এল, দেখল, বিশ্বাস করলসবাই থুতু ছেটাতে শুরু লাগল অপরূপকুমারের ছবিতে, দাহ করল কুশপুত্তলিকাসমস্ত খবরে, লোকের মুখে তখন কেবল এক প্রদর্শনীর কথা ক্রসফায়ার এন্ড এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং আম্রিকায় বসে সব খবরই পেলেন ম্যাডাম আকাশীসে বহুদিন আগেই অপরূপকুমারকে ছেড়ে এক বিদেশীর সঙ্গে হলিউডে পাড়ি দিয়েছিলদেশের রিপোর্টাররা সবাই আম্রিকায় যেতে লাগল আকাশীর একটা স্টেটমেন্ট পাওয়ার জন্যেকিন্তু তিনি মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেন, অপরূপকুমারের মৃত্যুদন্ড ঘোষণার ব্যপারে কোনো স্টেটমেন্ট দিলেন না।...


পুরো মালটা পাবেন এইখানে। কোন ব্যক্তি বা স্থানের সঙ্গে কোন রূপ মিল পেলে তা কাকতালীয় বলে মনে করাই ভাল। তা মোটেও ইচ্ছাকৃত নয় জানবেন। এই সিরিজের এইলেখাটি লেখা অবশ্য বাংলাদেশের বাইরে বসে তবে তাতে কিছু আসে যায় না।

সাপলুডু


সেই দেশে সকলেই ছিল খেলায় মত্ত প্রজারা সারাদিন ঘরে বসে হরেক কিসিমের সাপলুডু খেলত, কারুর কোন কাজ করা লাগত না সেই রাজ্যের রাজা ছিলেন সাপলুডু খেলায় মহা ওস্তাদ খেলতে বসলে তার আর দিন রাতের হিসাব থাকত না তাই খেলার জন্য সবসময় আলোয় ঝলমল করত প্রাসাদ বিদ্যুতের ছিল অফুরন্ত যোগান লোডশেডিং বলে কোন শব্দ তার কোনদিন শোনেইনি পিঁপড়েরা মাটি খুড়লেই উঠে আসত পেল্লাই পেল্লাই কয়লার চাঙড়, সারা দেশেই তা ছিল অফুরন্ত এছাড়া পারমানবিক বিদ্যুৎ আর রাসায়নিক বিদ্যুৎ ছিল অপারেশন জলভাত

বিভিন্ন দেশ থেকে রানী বাছাই করে আনা সাপলুডু খেলিয়ে খেলিয়ে রাজপ্রাসাদে ৯৯ জন রানীদের ছিল ঠিক ১০০টা ঘর রাজা একেকদিন খেলতে বসতেন একেকজন রানীর সঙ্গে ছক্কা থেকে পুট যাই পড়ত সেই হিসাবে রানীর ঘর বদলে যেত কেউ মই বেয়ে তরতর করে উপরে উঠত আবার আবার কেউ সাপের মুখে পড়ে সাঁ করে নেমে যেত এতটুকু ভুলচুক তার সহ্য হোত না
রাজা ভারী আমোদ পেতেন রানীদের সঙ্গে সাপলুডু খেলে কিন' তার নিয়ম ছিল খুব কড়া

বিস্তারিত পড়ুন- এইখানে

এইটাই বোধ হয় এই সিরিজের প্রথম লেখা। ফর্ম বদলাতে চাইছিলাম কনসাসলি, এই দাঁড়াল, এবং পরপর ছোটবড় মিলিয়ে খান দশেক লিখেছি বাংলাদেশে বসে একবছরে। আপাতত এটি সাপলুডু ওয়েবসাইটটির ভূমিকা মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। মধ্যে ছাপাও হয়েছিল সাপলুডোর ছাপানো কোর্টের পেছনে, বিক্রিবাটাও হয়েছিল খান কতক সেই ২০০৮ এ ছবির হাট, শাহবাগ ও চারুকলার বৈখাখীমেলায় সাপলুডু পারফরম্যান্সের সময়। জীবন সত্যিই বিচিত্র।

গায়ে মাখার হরলিক্স

সে একটা সময় ছিল যখন আমরা বোতলের ভেতর ঘুমিয়ে পড়তাম বোতলেরই মধু খেয়ে, চারপাশে মৃদু গান বাজত, এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি। তখন দেশ মানে ম্যাগাজিন ভাবতাম না, ম্যাগাজিন মানেই এ.কে. সিরিজ। এই লাইন ওড়াচ্ছি তো এই প্লেন হাইজ্যাক। সাক্সেস মানেই বোতল, আরো বোতল। মাঝে মাঝে হিন্দী সিনেমার নায়িকা আনাতাম অর্ডার দিয়ে। দূর পাগল নিজের জন্য না। মিনিস্টার-ফিনিস্টার এলে লাগত। আমার ছিল কেবল বোতল। নায়িকাদেরও ঢুকিয়ে রাখতাম বোতলে। চরিত্র নিয়ে কোন কথা হবে না।


লেখা হয়েছিল লোটাকম্বল ব্লগে তাও রোহনের একটি উওর-ব্লগ হিসেবে। সাগরের বুদ্ধিতে সামান্য বাড়িয়ে বেরোল সাপলুডু ওয়েবজিনে। তা বেরোল যখন এখানেও থাক, বই-ফই এ তো আর জায়গা হবে না। পড়ুন আপাতত এইখানে- http://www.shapludu.com/article10.php

Friday, July 03, 2009

জয় বাংলা






এটা সেই সময়ের কথা যখন বানানো হচ্ছিল এক মস্ত বিউটিফুল কারাগার, সেটা বোধহয় বেহেস্ত জাহান্নম বানানোরও অনেক আগের কথা৷ সে এক মস্ত প্রজেক্ট, সেলের সংখ্যা যেমন অগুন্তি তেমনি একেকটার সাইজ ৷ অদৃশ্য শব্দে ধক ধক করে দেওয়াল উঠছে সুপারম্যানের মত, টুংটাং করে গরাদ বসছে রাহুল দ্রবিড়ের মত, সে এক অপূর্ব ফ্যানটাস্টিক ফাটাফাটি ব্যাপার৷ সকলেই টুকটাক খবর পান, রাস্তাঘাটে লোকে কানাকানি করে কিন্তু সেটা যে কোন দেশের ঠিক কোথায় তৈরি হচ্ছে তা কেউ জানে না৷ এক বাঙালি রাজকুমার তার বাবার কাছে বায়না ধরে বসল, সে ঐ কারাগারে বাকি জীবনটা থাকতে চায়৷ বলা তো বলা, দড়াম করে আহার-গোসল সবই সে দিল ছেড়ে৷ কয়েকমাস আগেই সে আব্দার করেছিল সেনাপতির স্ত্রীকে উঠিয়ে এনে বিয়ে করতে, তখনও রাজা রাজী হন নি৷ সমস্যা খুবই জটিল আকার ধারণ করল৷

রাজকুমারের মা রাজকুমারকে খুবই ভালবাসত৷ সে মহারাজকে গিয়ে বলল, আমি কি অপরাধ করেছি বলুন, আমার ছেলে যা চায় তাতেই আপনি বাগড়া দেন? রাজা খানিকক্ষণ রানীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন হাঁদার মত৷ দেখেন মাতৃস্নেহ ঝরে ঝরে পড়ছে রানীর চোখে৷ রাজা তাকে হাত বাড়িয়ে কোলে টেনে নিলেন৷ রানী দেখলেন রাজা একটু নরম হচ্ছেন৷ চুপ করে থাকলেন রানী৷ আদরে আদরে ভরিয়ে দিলেন রাজা৷ চটজলদী একটা ফাস্টোকেলাস সোহাগ হয়ে গেল কিন্তু ভোবি ভোলবার নয়৷ রানী তাল করছেন কখন সে তার ছেলের জন্যে রাজত্ব আর রাজকন্যা বাগাবেন৷ মুখে মুখে খুব প্রশংসা করতে লাগলেন রাজার এই অবিশ্বাস্য ফর্মের৷ রাজা লজ্জা পেলেন, এতে আমার কোন ক্রেডিট নেই, সব আই পি এলের ইনফ্লুয়েন্স৷

রানীর পরামর্শই বহাল রইল৷ এক ঘুটঘুটে রাতে রাজকুমার সেনাপতির বউকে উঠিয়ে আনবে৷ সে যদি না আসতে চায়, তাকে প্রচুর লোভ দেখানো হবে, তারপরও যদি না চায় তাহলে তাকে প্রয়োজন মত রেপ-টেপ করে নিয়ে আসা হবে৷ আর রাজা সকালবেলায় রাজকুমার আর সঙ্গিনীকে শাস্তিস্বরূপ নির্বাসনে পাঠিয়ে দেবেন এক অন্ধ কারাগারে৷ বেঁকে বসল রাজকুমার, আপনার ঐ এঁদো কারাগারে আমরা থাকবো না৷ সেই যে কোথায় ফ্যাসিনেটিং কারাগার তৈরি হচ্ছে আমারা সেখানে গিয়ে থাকব, ড্যাড প্লিজ৷

(2)

ছোটবেলা থেকেই শ্রেয়সী একটা শখ মনের মধ্যে পুষে রেখেছিল৷ তার ভ ঈষণ ইচ্ছে ছিল সিনেমায় নায়িকা হওয়ার৷ ছোটবেলা থেকেই সে ছিল ফিল্মফেয়ার আর স্টারডাস্টের পোকা৷ আমীর খানকে সে ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালবাসত৷ তার খুব ইচ্ছে ছিল জীবনে একবার অন্তত আমীর খানের নায়িকা হওয়ার, কিন্তু সে কথা সে কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারত না৷ সে শুধু ফিল্মি ম্যাগাজিন থেকে আমীর খানের ছবি কেটে তার পারসোন্যাল আলমারির ভিতরের দিকের পাল্লায় চিপকে রাখত৷ ইভেন তার স্বামীও তার এইসব ইচ্ছা বা কর্মকান্ডের কথা জনত না৷ তবে তার মনে একটা সন্দেহ ছিল৷ প্রত্যেকদিন শ্রেয়সী তার হাতে বাজারের ফর্দ ধরিয়ে দিত, রোজগার বাজার থেকে তাকে কিনে আনতে হত গাদা গাদা বডি স্পে, ডিও, সেন্ট, কোল্ডক্রিম, বডি লোশন, শ্যাম্পু, ক্লিনজিং ক্রিম, অলিভ অয়েল, সান ইস্ক্রিন লোশন, ডিম, ব্যাসন, শশা৷ সেগুলো দিয়ে তৈরি হত কিম্ভুত কিমাকার সব খাবার৷ সুন্দরী স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ বুজে তিনি সেসব খেয়ে নিতেন৷

শ্রেয়সীর মুখের সব কথাই ছিল খুব মিষ্টি৷ কাউকে কিছু বললে সে না করতে পারত না৷ তার এক অদ্ভূত শক্তি ছিল৷ সে হাসিতে মানুষ মারতে পরত৷ স্কুল-কলেজে থাকতে শিক্ষকদের ও সহাপাঠিদের হাসি দিয়ে মেরে ফেলেছিল৷ দুইবার চাকরির ইন্টার্ভ্যু দিতে গিয়ে বোর্ডের ডিরেক্টরকেই সে মেরে ফেলে হাসি দিয়ে৷ চাকরি তো পায় না উপরোনতু শ্রেয়সীর বাবা-মা খুবই ভয় পেয়ে দেশের সব চেয়ে শক্তিশালি মানুষের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়ে দেয়৷ মজার ব্যপার বিয়ের পর আর কখনই সে কোনদিনও হাসেনি৷ শ্রেয়সী কখনই ঘরের বাইরে যেত না, সে সব সময় আল্লাহ তালার কাছে নিয়ত করত, এতগুলো মানুষ মারার জন্যে আল্লাহ তালা তাকে যেন দুনিয়ার সেই সেরা কারাগারে রাখেন, চাইলে আরো দু-এক ডজন না হয় তিনি হাসি দিয়ে মেরে দেবেন কিন্তু সেই কারাগারে তার থাকা চাইই৷


ফেসবুকে শ্রেয়সীর ছিল প্রায় 250 ফ্রেন্ডস আর 241 জন ফ্যান৷ তার জীবনের টার্গেট ছিল এই দুটো সংখ্যাকে সমতায় আনা৷ এর মধ্যে একদিন ফ্রেন্ডশিপ রিকোয়েস্ট এল দেশের রাজকুমারের কাছ থেকে৷ প্রথম কিছুদিন ঝুলিয়ে রেখে পরে তার ফ্রেন্ডশিপটা অ্যাকসেপ্ট করে নিলেন৷ খুচরো মেসেজ চালাচালি শুরু হল৷ মওকা বুঝে সো হা গ দেখাতে শুরু করলেন শ্রেয়সী, হাজারো বায়নাক্কা৷ গলে গেলেন রাজকুমার৷ শ্রেয়সীর মাথা ছিল হেব্বী কুল আর শার্প, সে রাজকুমারকে পটাল, একটা ফিল্ম প্রোডিঊস করার জন্যে৷ আমীর খান হবে নায়ক, আর " ইচ্ছে হলে আমাকে নায়িকা নেন'৷ প্রস্তাব শুনে রাজকুমার বলে উঠলেন, ইউরেকা৷ দোস্তদের সঙ্গে অনেকক্ষণ চ্যাট করে ঠিক করলেন, রাজকুমার সন্তোষীকে দিয়ে একটা ফিল্ম বানাবেন৷

(3)

রাজকুমার তার দুই দোস্তকে নিয়ে মুম্বাইএর ষ্টুডিও পাড়ায় ঘুরে বেড়ালেন৷ বলিউডের সেটের জৌলুস দেখে মনে হল তাদের রাজপ্রসাদ ম্লান৷ সহনায়িকাদের দেখে মনে হল, আহা এদের কেন ফেসবুকে দেখিনি! অবশেষে রাজকুমার সন্তোষীর সঙ্গে দেখা হল৷ তিনি তখন দুইজন উঠতি নায়িকা নিয়ে বিশ্রাম করছিলেন৷ তিনি প্রথমেই জানতে চাইলেন বাজেট কত? রাজকুমার অতশত ভেবে আসেন নি, জিজ্ঞাসা করলেন, পাঁচশো কোটি স্বর্ণমুদ্রায় হবে? শুনে শ্রী সন্তোষী গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসলেন৷ উঠতি নায়িকা দুটোর পাছায় ধাক্কা দিয়ে বললেন, এই তোরা এখন যা:৷

সত্তরজন নায়িকার একটা লম্বা লিস্ট তৈরি হল, অ্যালিনা জোলি, জুলিয়া রবার্টস, নিকোলে কিডম্যান, জেনিফার লোপেজ, লিন্ডসে লোহন, ব্রিটনি স্পিয়ার্স, এভালং গোরিয়া, অ্যালিসিয়া সিলভাস্টোন, ড্যানিয়েলা পোস্টাভা, কেট উইনস্লেট, মনিকা বেলুচ্চি, পামেলা আন্ডারসন, ঐশ্বর্য রাই, নিকোলে রিচি, সালমা হায়েক, শ্যারন ষ্টোন, শাকিরা, ক্যাটরিনা মুনিরো, অ্যালেক্সা ভেগা প্রভৃতি৷ ডিরেক্টারের লিস্টি শুনে প্রোডিউসার হেব্বী খচে গেল, লিস্টে শ্রেয়সীর নাম নেই! তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতি হওয়ার উপ্ক্রম৷ সন্তোষী কিছুতেই 71 জন নায়িকা নেবেন না, টাকা বাড়ালেও; না৷ 71 সংখ্যাটা খুব গোলমেলে, অনেককিছু উল্টেপাল্টে যায়; সিনেমা ফ্লপ করার চান্স পুরোপুরি৷ শেষে আমাদের রাজকুমার নিজের হাতে মিনাক্ষী শেষাদ্রীর নাম কেটে শ্রেয়সীর নাম ঢুকিয়ে দিলেন, প্রোডিউসার তো৷


অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দেখা হল আমীর খানের সঙ্গে৷ তিনি তখন শুটিং করছিলেন অফ্রিকার এক জঙ্গলে৷ রাজকুমার সেখানে গেলেন সেই দুই দোস্তকে সঙ্গে করে৷ শুটিংএর ব্রেকে কথা হল আমীরের সঙ্গে৷ আমীর প্রথমেই গল্প শুনতে চাইল৷ রাজকুমারের রাইটহ্যান্ড বলল, কোন চিন্তা করবেন না, STD বাচ্চা থাকবে, AIDS পেশেন্ট থাকবে, কোন ফালতু গল্প-টল্প নেই, শুধু নাচ, প্রচুর অ্যাকশন আর 28 মিনিটের উপর সেন্টিমেন্ট আছে৷ লেফটহ্যান্ড বলল, গুরু, 71জন নায়িকার একজন বাদে প্রত্যেকের 2 মিনিট করে ইস্কিন প্রেজেন্স আপনার 120 মিনিট৷ আমীর শুনেই রাজি হয়ে গেল৷ বলল আমার ক্যারেক্টারটা সারা ফিল্মে শীর্ষাসনে থাকবে, টপ টু বটম৷ ড্যান্স, সেক্স, অ্যাকশন এভরিথিং ঐভাবে৷ আমি আগামি একবছর ওটা প্র্যাকটিশ করব৷

(4)

প্রচুর সোহাগের পর রানী আব্দার করলেন, অমন সুন্দর একটা কারাগার কেন বাংলাদেশে বানানো সম্ভব নয়? একটা বানিয়ে দেন না! ছেলেটার যখন এত শখ৷ রাজা দেখলেন এই প্রস্তাবটা মন্দ নয়৷ একেবারে দেশের সীমানা বরাবর পাঁচিল তুলে মস্ত একটা কারাগার বানিয়ে ফেললে হয়, সবাই থাকল সেই কারাগারে৷ দেশ বিদেশ থেকে মানুষ দেখতে এলে পয়সাও হবে আর ছেলেটাকেও দূর কোন দেশে পাঠাতে হবে না৷ যেমন ভাবা তেমন কাজ, পরদিন রাজদরবারে ঘোষণা করে দিলেন, পুরো দেশটাকে তিনি বানিয়ে ফেলবেন ফ্যান্টাসস্টিক কারাগার, ইন্শাল্লা৷ সবাই তোবা তোবা করে উঠল৷ খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রজারা খুশিতে নেমে পড়ল রাস্তায় রাস্তায়৷ সারা রাত চলল নাচ, গান আর ব্ল্যাংক ফায়ার; এন্ডলেস ফুর্তি৷

বাঘা বাঘা ফিল্মের আর্ট ডিরেক্টররা এসে সবাই এক একটা করে হেলিকপ্টার নিয়ে দেশের উপর চক্কর মারতে লাগলেন আর প্ল্যান ভাজতে লাগল৷ কি করে এটাকে কারাগারে শেপ দেওয়া যায়! দেশ-বিদেশের ফ্যাশন ডিজাইনারা এসে অনেক ব্রেনস্ট্রম করল কেমন হবে কয়েদিদের কস্টিউম৷ বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে মডেলদের দিয়ে বিভিন্ন পোষাকে রাম্প করানো হল, রাজার একটাও পছন্দ হয় না৷ কি রকম সব খোলামেলা, মেয়েমানুষের একটা পর্দা থাকবে না, ইয়ে আল্লাহ৷ রাতে রানী পরামর্শ দিলেন, বিদেশী মিনসে দিয়ে কি এইসব হয়? সব হচ্ছে এফ টিভির কপি৷ বাবা মোস্তাফাকে ডাকলে অনেক বেটার রেজাল্ট পেতেন৷


শিল্প নির্দেশকরা বোর্ড মিটিং করে ঠিক করল অর্জিন্যাল নদ-নদী-ক্ষেত-খামার জেলের ভেতর রাখলে খুব বেখাপ্পা লাগছে,ওগুলো সব ক্যানভাসে এঁকে পার্সপেক্টিভে টানিয়ে দেওয়া হবে৷ স্পেসও কম লাগবে আর জেলের অ্যাটমোস্ফিয়ার্টাও স্নুদিং হবে৷ সবাই তোবা তোবা করে উঠল৷ এদিকে বাবা মোস্তাফা চটের ছালা দিয়ে আপাদমস্তক ঢাকা একটা পোশাক বানিয়ে ফেললেন, বাইরে থেকে লকারের মত শুধু নম্বরটা দেখা যাবে৷ দেশে মানুষের মধ্যে আর কোন ভেদাভেদ রইল না৷ আম্রিকা থেকে ওবামা দ্রুত শুভেচ্ছা পাঠালেন৷ বিপুল সংখ্যক পোশাক বানানোর ফলে পাটশিল্প আবার রিভাইব করল, ইকোফ্রেন্ডলি চিন্তাভাবনার জন্য রাজা হঠাত্ করে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়ে গেলেন৷

(5)

পাটশিল্প-শ্রমিক আর বন্দুকধারী সৈনিক ব্যতীত দেশে কারুরই আর কোন কাজ রইল না৷ সকলেই নিজের সেলের ভেতর থাকে ৷ খায় দায়, টেলিভিশন দেখে আর ঘুমায়, বিন্দাস৷ প্রহরীরা বন্দুক কাঁধে দেয় কড়া পাহারা ৷ পুরো দেশটাই কারাগার হয়ে যাওয়ায় সেনাপতির কাজ বহুগুণ বেড়ে গেল৷ বেশিরভাগ দিনই সে সেলে ফিরতে পরত না৷ তার ভয়ঙ্কর রূপসী স্ত্রী শ্রেয়সী সবসময় ভুগত নিরপত্তহীনতায়৷ তাঁর খাস বাঁদীদের শ্রেয়সী একই সেলে এনে রাখল৷ চটের আলখাল্লার নীচে চেহারা সব একইরকম লাগে শুধু নম্বর আলাদা৷ সেনাপতি অনেকদিন বাদে বাদে ফেরে তাই তার নম্বর মনে থাকে না৷ একেকদিন একেক নম্বরের সঙ্গে শুয়ে পড়ে৷

এটা শুধু সে নয়, অনেকেই শুরু করল৷ সারা দেশে ভারী বিশ্রীঙ্খলা দেখা দিল৷ কারারক্ষীরাও এর সুযোগ নিচ্ছিল৷ যেমন একদিন রানী অনেক আদর খাওয়ার পরে বুঝলেন এটা অর্জিন্যাল রাজা নয়! "ট্রায়াল এন্ড এরর' মেথডে অবশেষে খুঁজে বার করেন রাজাকে, বলেন, এভাবে চলা তো সম্ভব নয়! চলুন আমরা বর ংবিদেশে চলে যাই৷ রাজা দেখলেন সেই ভালো, রাজা-রানীর কারাগারে থাকা ভালো দেখায় না আর নোবেল পাওয়ার পর তার "অবৈপ্লবিক সমাজতন্ত্রের' মডেলের ওপর অনেক বক্তৃতা দেওয়ার রিকোয়েস্ট এসেছে৷ রাজা শুধু বললেন, তাই চলো৷

রাজকুমার শ্রেয়সীকে ছেড়ে বিদেশে যেতে কিছুতেই রাজী হল না৷ সে আমীর খানের ব্লগে তার শীর্ষাসন প্র্যাকটিশের ছবিগুলো ডাউনলোড করে নিজের ফেসবুক অ্যালবামে তুলছিল৷ তার ব্যস্ততা দেখে রাজা রানী তাকে ফেলেই নিজস্ব ফকারে করে বিদেশে চলে গেল৷ রাজকুমার প্লেনের আওয়াজ শুনে ফেসবুকে নিজের ছবির জায়গায় সিংহাসনের ছবি লাগিয়ে দিল৷ নিমেষের মধ্যে প্রচুর সুন্দরী তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে লাগল৷ রাতারাতি রাজকুমারের ফ্যানের সংখ্যা বেড়ে 1000এ পৌঁছালো৷ ঘ্যামা ঘ্যামা সুন্দরীদের হাতের মুঠোর মধ্যে পেয়ে রাজকুমার শ্রেয়সীর কথা বেমালুম ভুলে গেল৷ সে ফেসবুক থেকে 5জন অসাধারণ সুন্দরী বেছে নিয়ে মহানন্দে ফ্লার্ট করতে লাগল৷

(6)

দেশের নতুন রাজা কে হবে তাই নিয়ে মহা সোরগোল বাধলো৷ আম্রিকা চাচ্ছিল সেনাপতিকে রাজা করতে; সে লোকটা এ যাবত্ বহুবহু টাকার স্নো, পাঊডার সেন্ট কিনে বহুজাতিক সংস্থাগুলোকে একটা ভালো সাপোর্ট দিচ্ছিল৷ আর ভারত চাচ্ছিল রাজকুমারকে রাজা করতে কেননা কারাগারের ভেতর ব্যবসা বাণিজ্য খুবই কমে গিয়েছিল৷ আম্রিকা সেনাপতিকে খুশি করতে তার স্ত্রীকে হলিউডে নায়িকা হওয়ার অফার দিল৷ শ্রেয়সী রাজকুমারকে হারিয়ে একটু মুষড়ে ছিল, নায়িকা হওয়ার অফারে সে চাঁদ হাতে পেল আর তক্ষুনি সেলের ভেতর ইংরাজী খবরের কাগজ, বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশের নির্দেশাবলী মানে যা যা ইংরাজীতে লেখা পেল তা মন দিয়ে মুখস্ত করতে শুরু করল৷ স্বামীকে বলল, তুমি এখন থেকে আমার লগে ইংরাজীতে আলাপ করবা, আন্ডারস্ট্যান্ড?

রাজকুমার যেই টের পেলেন তিনি সিংহাসনের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছেন তখনই ছুটলেন মুরুব্বিদের কাছে৷ তারা সবাই তার পিতৃব্য, রাজকুমারের ভালই চান তারা৷ বললেন, রেডিওতে একখান ঘোষণা দাও না বাপ! রাজকুমার হাজির বেতার কেন্দ্রে, ঘোষণা দিলেন, স্লাম আলেইকুম, আমি আপনাদের প্রিয় রাজকুমার৷ রাজার অবর্তমানে আমি স্বেচ্ছায় এই দেশের শাসনভার গ্রহণ করলাম৷ আমি চাই সৈনিক ও পাটশিল্প শ্রমিকগণ পূর্বের ন্যায় কাজ চালিয়ে যান৷ যারা কর্মহীণতায় ভুগছেন তারা ইন্টারনেটে চ্যাট করে সময় কাটান৷ কয়েদীবন্ধুরা, আপনাদের কোনরকম অসুবিধা হলে ফেসবুকে আমাকে ম্যাসেজ পাঠান৷ রেডিওর এই ঘোষণা খুব অল্প সময়ে সারাদেশে এমনকি আম্রিকাতেও ছড়িয়ে পড়ল৷

দেশ দখলের সুযোগ আম্রিকা অত সহজে চাড়বে কেন? তার উপর তারা শুনেছে পুরো উত্তরাঞ্চল জুড়ে আছে কয়লা খনি! নো হালকা দেওয়া৷ তাদের অবিরত উস্কানিতে লেগে গেল গৃহযুদ্ধ৷ সেনাপতি কারারক্ষীদের সঙ্ঘবদ্ধ করে দেখলেন রাজকুমারের ফেসবুক কমিউনিটি আরো ইস্ট্রং, এমনকি নিজের কবুল করা স্ত্রীও অপজিট এন্ডে৷ শুরু হল ভয়ঙ্কর যুদ্ধ৷ ভাই ভাইকে খুন করতে লাগলো৷ চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ৷ মাঝে মাঝে আওয়াজ উঠছে কখনও , জয় সেনাপতির জয়; কখনও জয় রাজকুমারের জয়, কখনও জয় আম্রিকার জয় তো কখনও জয় ফেসবুকের জয়৷ কেউ একবারো বললো না , জয় বাংলা৷ বিদেশ থেকে শান্তি কমিশনের লোকেরা এসে দেশটাকে দুইভাগ করে দিল, পার্মানেন্টলি৷



দীর্ঘদিন বাংলাদেশবাস আমার লেখা-না-লেখা নিয়ে আমাকে তিতিবিরক্ত করে তুলছিল৷ সচ্লদের কাছে লিখতে কেউ যেন মাথার দিব্যি দিয়েছিল, ভাষা হচ্ছিল সহজ কিন্তু তির্জক৷ পরপর তৈরি হচ্ছিল লেখাগুলো, ফিরে আসছে বংলাদেশীদের কাছ থেকে, আপলোড হলো না গোটা ওয়েবসাইটাই, এগুলো কেবলই ঘ্টনা ৷ প্রকাশনা বিভ্রাট বিরক্তি আরো তীব্র করে কেবল৷ তবু এই লেখাগুলৈ আমার বাংলাদেশ সমগ্র, গত এক বছরের দলিল৷ গল্পটি প্রকশিত সৃষ্টি অনলাইন পত্রিকার ৫ম বর্ষপূর্তি সমারোহে, রোহনের করা পত্রিকার মলাট বিনা-অনুমতিতেই থাকল, স্রেফ আমার পছন্দ বলে৷